Monday, August 26, 2024

আসুন জেনে কোন কোন আমল এর মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি করা যায়

 আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সকল প্রাণীর বিজিকের নির্ধারন করেন। তিনি সর্বোত্তম বিজিকদাতা। আল্লাহ তায়ালা ব্যতিত অন্য কেউ রিজিক এর ফয়সালা করতে পারেন না।  তিনি যাকে ইচ্ছা তার রিজিক বৃদ্ধি করেন। আবার যাকে ইচ্ছা তার রিজিক সংকুচিত করেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের এমন কিছু বর্ণনা রয়েছে, যেগুলোতে রিজিক বৃদ্ধির আমল সম্পর্কে বলা হয়েছে।  আসুন আমরা জেনে নিই রিজিক বৃদ্ধির আমল সমুহ ।

তওবা-ইসতেগফার করা : তওবা-ইসতেগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে উন্নতি দান করবেন, তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ (সুরা নুহ ১০-১২)

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইসতেগফার করবে, মহান আল্লাহ তাকে সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ)

আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা : যেসব আমলে রিজিক বাড়ে সে সবের মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন করা এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ (সুরা সাদ ৩৫)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো, তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ (তিরমিজি)

হজ-ওমরাহ পালন : হজ ও ওমরাহ পালন করার দ্বারা রিজিক বৃদ্ধি হয়।  যাদের সামর্থ আছে তারা হজ ও ওমরাহ পালন করতে পারেন।   রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা লাগাতার হজ ও ওমরাহ পালন করতে থাকো। কারণ এর দ্বারা এমনভাবে অভাব ও গুনাহ দূরীভূত হয় যেমনভাবে কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়।’ (তিরমিজি)

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম আমল হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করতে এবং তাদের হক যথাযথভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (সহিহ বুখারি)

আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা : আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় তথা দান-সদকা করার দ্বারা রিজিক বাড়ে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা ৩৯)

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা : যেসব কাজকর্ম বা আমলে রিজিক বাড়ে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, মহান আল্লাহ যেসব নেয়ামত দান করেছেন, সে সবের জন্য কৃতজ্ঞতা  প্রকাশ  বা শুকরিয়া আদায় করা। মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার দ্বারা নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম ৭)

অসহায়ের প্রতি সদয় হওয়া : গরিব-অসহায় মানুষের প্রতি সদয় হলে রিজিক বাড়ে। আমরা আমাদের প্রতিবেশী গরিব অসহায়দের প্রতি সদয় আচরন করতে পারি, তাদের সাহায্য সহায়তা করতে পারি।   রাস্তাঘাটে গরিব-অসহায় মানুষকে হাত বাড়াতে দেখলেই সবাইকে এক পাল্লায় মেপে খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র ইরশাদ করেছেন, ‘তাদের (ধনী লোকদের) সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত ১৯) রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ (সহিহ বুখারি)

আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া : সর্বদা আল্লাহ তায়ালা মুখাপেক্ষী থাকা। আল্লাহর কাছে সহায্য  প্রার্থনা করা ।  মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে রিজিক বাড়ে। আমরা এমন এক স্রষ্টার সৃষ্টি, যিনি চাইলে খুশি; না চাইলে অখুশি। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন ৬০)

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা :  সর্বদা রিজিকের তালাশ করা। নিজ কর্মের মাধ্যমে রিজিক অর্জনের   জন্য চেষ্টা করা।    আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো। যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা ১০)

 মহান আল্লাহ আমাদের এই আমলগুলোর মাধ্যমে কল্যাণকর রিজিক দান করুন। আমিন।

ইন্টারনেট হইতে সংগ্রহীত ।

 

 

Thursday, August 1, 2024

আসুন জেনে নেই কিভাবে কাজে মনোযোগ ধরে রাখা যায়

  

 

 

কাজে মনযোগ ধরে রাখা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে আমাদের জন্য। যেকোনো কাজে সাফল্যের পূর্বশর্ত হচ্ছে মনোযোগ দিয়ে কাজ করা। কাজে মনোযোগ ধরে না রাখতে পারলে শুধু কর্মদক্ষতা কমে যায় না, বরং কাজের মান, কাজ করার ইচ্ছা, আগ্রহ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। আসুন জেনে নেই কিছু  কৌশল যা আমাদের কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করবে ।

 

যে কোন কাজ শুরুর আগের  সময়সীমা নির্ধারণ করুন:

যেকোনো কাজ শুরু করার আগে সে কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করাটা জরুরি। কত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে হবে, তা যদি আগে থেকে জানা যায়, তাহলে কাজে গতি বাড়ে। সময় বেঁধে দেওয়া থাকলে নিজের মন অবচেতনে একটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটা শেষ করার জন্য মন তাড়াহুড়া করে। মনে রাখতে হবে, কাজের মধ্যে বারবার ঘড়ি দেখলেও মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে।

 

প্রতিদিনের কাজের একটি  তালিকা তৈরি করুন এবং অনুসরন করার চেষ্টা করুণ:

আগামীকাল কী কী কাজ করতে হবে, সেগুলো আগেই ঠিক করে নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তালিকার প্রথম দিকে রাখতে হবে। তারপর একটু কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এভাবে পর্যায়ক্রমে তালিকা তৈরি করলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ বাকি থাকবে না। আগামীকাল কী কী কাজ করতে হবে, সেগুলো যদি আগেই ঠিক করে রাখা যায়, তাহলে কাজের গতি ঠিক থাকে। মনোযোগও ঠিক থাকে। অন্যদিকে সময়ও বাঁচানো যায়। যদি এক দিন আগে কাজের শিডিউল তৈরি করা সম্ভব না হয়; তাহলে ঘুম থেকে উঠে সকালে প্রথম গুরুত্ব অনুসারে কাজের তালিকা তৈরি করে নিতে হবে। কাজটা করতে কত সময় লাগবে, সেটাও লিখে রাখতে হবে।

 

মাঝে মধ্যে কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন এবং কাজের মাঝে কিছু বিরতি নিন:

একটানা অধিক সময় কাজ করলে কাজে মনোযোগ না থাকারই কথা। কারণ, একটানা অনেক সময় কাজ করলে স্বাভাবিকভাবে মানব মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে যায়। কাজের গতি কমে যায়। তাই কাজের গতি ঠিক রাখা এবং কাজে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য কাজের মাঝে - মিনিটের বিরতি নিন। এতে সতেজতা আসবে। আর কাজেও গতি, মনোযোগদুটোই থাকবে।

 

একাধিক কাজ একসাথে না করার চেষ্টা করুন:

আমরা অনেকে একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে চাই। ফলে কোনো কাজই ঠিকঠাকমতো হয়ে ওঠে না। তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় সেই নির্দিষ্ট কাজটিই একমনে করতে হবে। অন্যদিকে মন দেওয়া যাবে না। কম্পিউটার একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারলেও মানুষের মস্তিষ্ক একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে গেলে কোনো দিকেই ফোকাস ঠিক রাখা যায় না। তাই যে কাজ করছেন, শুধু সে কাজই করুন। সেই কাজের প্রতি ফোকাস রাখুন। সেই কাজটি শেষ হলে অন্য কাজে হাত দিন।

 

কাজের জন্য সহায়ক ও  অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন:

ভালোভাবে কোনো কাজ সম্পন্ন করার জন্য সে কাজের অনুকূল পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ যতটা থাকবে, কাজটা তত অল্প সময়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সহজ হবে। তাই কাজ করার সময় কাজের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাশে রাখুন।

 

কাজের সময় সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেন আমাদের জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। কিছু সময় পরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ করতে না পারলে যেন অস্থির হয়ে যাই। কিন্তু কাজের সময় ঘন ঘন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ করলে কাজে নির্ঘাত ব্যাঘাত ঘটবে। তাই কাজ করার সময় যথাসম্ভব ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো প্রভৃতি থেকে দূরে থাকতে হবে। হাতের স্মার্টফোনটিও একটু দূরে রাখতে হবে; যাতে ঘন ঘন চোখে না পড়ে আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নোটিফিকেশন চেক করার জন্য ব্যস্ত হয়ে না উঠি।

 

 

কাজের মধ্যে নিজের অনুপ্রেরণা খুঁজুন:

কাজের মধ্যে অনুপ্রেরণা খুঁজুন। অনুপ্রেরণা পেলে কাজটি করার জন্য আপনার আগ্রহ, উদ্যম বেড়ে যাবে। আর যখনই আপনার কাজের আগ্রহ, উদ্যমে বেড়ে যাবে, তখনই কাজে পূর্ণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারবেন। আর কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করা আপনার জন্য সহজ হবে। তাই যেকোনো কাজ করার সময় অনুপ্রেরণা নিয়ে, আগ্রহ নিয়ে, কাজটি ভালোবেসে করুন।

 

সুস্থ শরীর সুস্থ মন :

কাজে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য শরীর সুস্থ রাখা অন্যতম শর্ত। শরীর সুস্থ না থাকলে কোনো কাজেই মন বসানো যায় না। শরীর সুস্থ রাখার জন্য পরিমিত খাবার খান, পানি পান করুন, ব্যায়াম করুন। মনে রাখতে হবে, দেহঘড়িটা ঠিকমতো সায় দিলে মনঘড়িটাও ঠিকমতো সংকেত দেবে। আর শরীর-মন ঠিক থাকলে যেকোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।

 

স্বাস্থ্যসম্মত আহার ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন:

কাজে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিমিত খাবার খান। আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, প্রার্থনা করুন। প্রার্থনায় মন সতেজ থাকে আর যেকোনো কাজে মনোযোগ দিতে তো মনই আপনাকে তাড়না করে। তাই আজ থেকে মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন। হয়ে উঠুন সফল সুন্দর মানুষ।