Tuesday, June 24, 2025
🌟 আয়াতুল কুরসি: কুরআনের রাজসিংহাসন
আয়াতুল কুরসি—পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাবান আয়াতগুলোর একটি। এটি সূরা আল-বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত। একে শুধু একটি আয়াত বললে কমই বলা হবে, বরং বলা যায়, এটি ইসলামের আকীদা, আল্লাহর একত্ববাদের গৌরবগাথা এবং মুসলিম জীবনের নিরাপত্তার কবচ।
✨ আয়াতুল কুরসির উচ্চারণ, অর্থ ও তাৎপর্য
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ-ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি, ইয়ালামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাই-ইম মিন ইল-মিহি ইল্লা বিমা শাআ, ওয়াসিয়া কুরসিইউহুস সামাওয়াতি ওয়ালআরদ, ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিইয়ুল আজীম।
বাংলা অর্থ:
আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সৃষ্টিকে ধারণকারী। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবই তাঁর। তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারে না। তিনি জানেন দৃষ্টিগোচর ও অদৃশ্য সবকিছু। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কেউ কিছু জানে না, যতটুকু তিনি প্রকাশ করেন, ততটুকুই। তাঁর কুরসি আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টন করে আছে, আর এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য কঠিন নয়। তিনি মহান ও সর্বোচ্চ।
🧠 আয়াতের গঠন ও অলৌকিক মিল
আয়াতুল কুরসি পড়লে বোঝা যায়, এটি একটি নিখুঁত কাঠামোর মধ্যে সাজানো। এতে মোট ৯টি বাক্য, যা একে অপরের সঙ্গে বৈচিত্র্যময় অথচ গভীর অর্থে সংযুক্ত:
• প্রথম ও নবম বাক্য আল্লাহর একত্ব ও মহত্ত্ব নিয়ে (আল্লাহ ছাড়া উপাস্য নেই → তিনিই সর্বোচ্চ এবং মহান)
• দ্বিতীয় ও অষ্টম বাক্য রক্ষাকর্তা আল্লাহর নিদ্রাহীন সত্তা ও সৃষ্টি ধারণ করার ক্ষমতা নিয়ে
• তৃতীয় ও সপ্তম বাক্য আসমান-জমিনের মালিকানা ও সেগুলোর পরিবেষ্টন
• চতুর্থ ও ষষ্ঠ বাক্য আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কিছু করতে পারে না এবং তাঁর জ্ঞানের গভীরতা
এইসব মিলের মাঝে দাঁড়িয়ে পঞ্চম বাক্যটি যেন আয়াতটির হৃদয়:
“দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সবই তিনি জানেন।”
আল্লাহর সর্বজ্ঞ সত্তাকে এই বাক্যটি অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে কেন্দ্রস্থ করে।
💎 ফজিলত: জান্নাতের দ্বার উন্মুক্তঃ
হজরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:“যে ব্যক্তি প্রতিটি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই বাধা হতে পারবে না।”
(নাসাঈ: ৯৯৫)
অর্থাৎ, একজন মুমিন যদি আন্তরিকভাবে এই আয়াতটি পড়েন, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়। শুধু মৃত্যুই সেই শেষ প্রহর যেটি তার জান্নাত-যাত্রার অন্তরায়।
🛡️ আয়াতুল কুরসি ও রাত্রিকালীন নিরাপত্তা
সহিহ বুখারির (হাদিস ২৩১১) এক আশ্চর্যজনক হাদিস থেকে জানা যায়, হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) শয়তানের ছদ্মবেশে আগত এক চোরের মুখ থেকে জেনেছিলেন:“ঘুমাতে যাওয়ার আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে আল্লাহ একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন, এবং সকাল পর্যন্ত কোনো শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।”
পরবর্তীতে রাসুল (সাঃ) আবু হুরায়রাকে বলেন:“সে চরম মিথ্যাবাদী, কিন্তু এই বিষয়ে সে সত্য বলেছে।”
📿 আমাদের জীবনে আয়াতুল কুরসি
• প্রতিদিন ফরজ নামাজ এর পর পাঠ করুন
• রাতে ঘুমানোর আগে পড়ে শয়ন করুন
• সন্তানদের মুখস্থ করাতে উৎসাহ দিন
• ঘরে ঢোকার সময়, বের হওয়ার সময় এবং ভয়ের সময়ে এই আয়াত পাঠ করুন।
📌 আয়াতুল কুরসি শুধু কুরআনের একটি আয়াত নয়, বরং এটি একজন মুমিনের হৃদয়ের শান্তি, আত্মার প্রতিরক্ষা এবং জীবনের সঙ্গী। প্রতিদিন নিয়মিত পাঠ করা, মনে রাখা এবং বুঝে আমল করাই হোক আমাদের ইবাদতের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই আয়াত আমাদের শেখায়—আল্লাহর জ্ঞান, ক্ষমতা ও করুণার সামনে আমরা কতটাই না ক্ষুদ্র, আর তিনিই আমাদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়।
0 comments:
Post a Comment