রাগ মানুষের স্বাভাবিক একটি আবেগ, যা অনিয়ন্ত্রিত হলে জীবনে বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে। এটি মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সামাজিক সম্পর্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ইসলাম রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কোরআন ও হাদিসে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
রাগের প্রকৃতি ও ক্ষতি
রাগ একটি মানসিক অবস্থা, যা অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা ও প্রতিশোধের ইচ্ছা থেকে উৎপন্ন হয়। ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন:
إِنَّ
هَذَا الْغَضَبَ جَمْرَةٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تُوقَدُ فِي قَلْبِ ابْنِ آدَمَ “নিশ্চয়ই এই রাগ হলো শয়তানের প্রজ্বলিত একটি স্ফুলিঙ্গ, যা আদম সন্তানের হৃদয়ে জ্বলে ওঠে।” (আল-কাফি,
খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০৪, হাদিস: ১২)
রাগের কারণে মানুষ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা তার জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়। এটি উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অপরাধবোধ, হতাশা, মাথাব্যথা, হৃদ্রোগ এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। কখনো কখনো এটি হত্যা বা রক্তপাতের মতো চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।
রাগ নিয়ন্ত্রণ: আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالْكَاظِمِينَ
الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ “যারা রাগ দমন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন।” (সুরা আলে ইমরান,
আয়াত: ১৩৪)
নবী ইবরাহিম (আ.)-এর পিতা তাঁকে পাথর ছুঁড়ে মারার হুমকি দিলে তিনি বলেছিলেন:
سَلَامٌ
عَلَيْكَ “তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।” (সুরা মারয়াম,
আয়াত: ৪৭)
আল্লাহ আরও বলেন:
وَالَّذِينَ إِذَا مَا غَضِبُوا هُمْ يَغْفِرُونَ “যারা রাগের সময় ক্ষমা করে।” (সুরা শুরা,
আয়াত: ৩৭)
রাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের উপদেশ
মহানবী (সা.) রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় বাতলে দিয়েছেন:
১. আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা
أَعُوذُ
بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ “আমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” (সহিহ বুখারি,
হাদিস: ৫০২)
২. নীরব থাকা
“তোমাদের কেউ ক্রুদ্ধ হলে সে যেন নীরব থাকে।” (মুসনাদে আহমদ,
হাদিস: ৬৯৩)
৩. শারীরিক অবস্থান পরিবর্তন
“যদি কেউ রাগান্বিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে, সে যেন বসে পড়ে। তাতেও রাগ না কমলে সে যেন শুয়ে পড়ে।” (আবু দাউদ,
হাদিস: ৪৭৬৪)
৪. নবীর (সা.) পরামর্শ অনুসরণ
“ক্রুদ্ধ হয়ো না।”(সহিহ বুখারি)
৫. জান্নাতের প্রতিশ্রুতি স্মরণ
“যে ব্যক্তি রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার হৃদয়কে সন্তুষ্টিতে ভরিয়ে দেবেন।” (তাবারানি, হাদিস: ১২/৪৫৩)
৬. নবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণ
একবার একজন বেদুইন নবীজিকে রুক্ষভাবে ধরে কিছু দাবি করেন, নবীজি (সা.) শান্তভাবে হেসে তাঁকে তা প্রদান করেন।
(ফাতহুল বারী, খণ্ড ১০,
পৃষ্ঠা ৩৭৫)
৭. দোয়া করা
اللَّهُمَّ
إِنِّي أَسْأَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، وَكَلِمَةَ الْحَقِّ
فِي الرِّضَا وَالْغَضَبِ
“হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রকাশ্যে ও গোপনে তোমার ভয় করার তৌফিক প্রার্থনা করি এবং সন্তুষ্টি ও রাগের সময় সত্য কথা বলার তৌফিক চাই।” (সহিহ আল-জামি,
হাদিস: ৩০৩৯)
রাগ যদি আল্লাহর অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে হয়, তবে তা প্রশংসনীয়। তবে ব্যক্তিগত স্বার্থে রাগ প্রকাশ করা আত্মা ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শুধু আত্মশুদ্ধির উপায় নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমও।
No comments:
Post a Comment