হাওর উৎপত্তি ও ইতিহাসঃ Genesis and History
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এর অবস্থান দক্ষিন এশিয়ার ক্রান্তিয় অঞ্চলে ৮৮ ডিগ্রি থেকে ৯৩ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা এবং ২০ডিগ্রি থেকে ২৭ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের ভেতরে।লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন বরাক নদীর পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বরাক নদী বাংলাদেশে প্রবেশের মুহুর্তে সিলেটের আলমশিদ নামক স্থানে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি শাখায় ভিভক্ত হয়েছে। এই সুরমা ও কুশিয়ারা নদী দুটোর অববাহিকাতেই বাংলাদেশের বিখ্যাত হাওর গুলো অবস্থিত।
দেশের উত্তর-পুর্বাঞ্চালে অবস্থিত হাওরগুলো দেশের প্রধান মিম্নাঞ্চল এলাকা। ব্রম্মপুত্র নদ তার প্রবাহপথ 1787 সালের বন্যা ও ভুমিকম্পের পর মধুপুর গড়ের পুর্বদিক থেকে পশ্চিমে পরিবর্তন করলে পলিমাটি ভরাট হওয়ার অভাবে ও অঞ্চল নিচু থেকে যায়। তাছাড়া মেঘালয় ও বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর সংঘটিত ‘ডাউকি চ্যুতি’র কারণে অতি প্রাচীনকালে এলাকাটি 3 থেকে 10 মিটার বসে যায়। তবে সোমেশ্বরী, যাদুকাটা/রকতি,ধামালিয়া/চলতি এবং সুরমা ও কুশিয়ারা নদী পলি বহন করে ক্রমশ হাওরগুলোকে ভরাট করে চলেছে।
অন্যমতে, বাংলাদেশের উত্তর-পুর্বাঞ্চলে ছিল এক দুর্দান্ত সমুদ্র কালিদহ সাগর। সেই সাগর কালের বির্তবনে ছোট বড় ভাগে ভাগ হয়ে হয়েছে হাওর। শব্দের উচ্চারনগত আঞ্চলিকতায় সাগরকে ‘সায়র’ বলা হতো। শব্দের অপভ্রংশ-সাগর>সায়র> হাওর।
বাংলাদেশে উত্তর-পুর্বাঞ্চলের৭ টি জেলার ৪৮ টি উপজেলায় বিস্তৃত ‘পিরিচ’ আকৃতির হাওর গুলি অবস্থিত।কাকতালীয়ভাবে হাওরের সাথে কেবল সিলেটের নামটিও বেশি জড়িত।সচরাচর সিলেট বেসিনকই হাওর মনে করা হয়। তবে হাওর মানে সিলেট নয় সিলেট বেসিন বলা যেতে পারে।সাতটি জেলার সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ অঞ্চল হাওর এলাকায় অবস্থিত। ভৈরব সেতুর কাছ থেকে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলা নাসিরনগর উপজেলার বৃহদাংশ হাওরে অবস্থিত।হবিগঞ্জ জেলা লাখাই ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলার প্রায় পুরোটাই হাওর এবং বানিয়াচং ও নবীগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ ই হাওর তবে এ দুই উপজেলায় উচু ভুমি আছে।মৌলভীবাজার উপজেলার বড়লেখা, কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় হাওর আছে। সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় হাওর আছে। মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার চারটি উপজেলায় হাকালুকি হাওর অবস্থিত। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় হাইল হাওর অবস্থিত।সুনামগঞ্জ জেলার সদর,ধর্মপাশা,তাহিরপুর,দিরাই,জামালগঞ্জ ও শাল্লা উপজেলা অধিকাংশই হাওর এলাকার। ছাতক,দোয়ারাবাজার,বিশ্বম্ভরপুর ও দক্ষিন সুনামগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকায় হাওর আছে। এই উপজেলা গুলোতে উচু ভুমি আছে।নেত্রকোন জেলার খালিয়াজুরি উপজেলার পুরোটাই হাওর অঞ্চল। মদন,মোহনগঞ্জ,আটপাড়া ও কমলাকান্দার অংশবিশেষ হাওরে অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ জেলা অষ্টগ্রাম,ইটনা ও মিটামইন উপজেলার পুরোটাই গভীর হাওর এ অবস্থিত। নিকলি, বাজিতপুর,ভৈরব ও করিমগঞ্জ উপজেলার অংশবিশেষে হাওর আছে। বাংলাদেশের উত্তর-পুর্বাঞ্চল সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় থেকে শুরু করে ভৈরব উপজেলার মেঘনা সেতু পর্যন্ত হাওর এলাকা বিস্তৃত। বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত যাচাই করে দেখা যায় যে, সুনামগঞ্জ,সিলেট,মৌলভীবাজার,হবিগঞ্জ,কিশোরগঞ্জ,নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার ৪৮টি উপজেলার ২৪১৭বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে হাওর অঞ্চল গড়ে উঠেছে। সাত জেলা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ সরাসরি হাওর অঞ্চলে বসবাস করে। তবে এর আশেপাশে বিপুল জনগোষ্টির সাথে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। হাওরের মোট জমির পরিমান ১৫ লাখ ৪৭হাজার ১৩৩ একর। এই সাত জেলা মোট হাওরের সংখ্যা ৩৯৫টি। হবিগঞ্জ জেলায় ৩৮টি, মৌলভিবাজারে ৪টি, সিলেট জেলায় ৪৩টি, নেত্রকোনা জেলায় ৮০টি,ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলায় ৩টি, কিশোরগঞ্জ জেলায় ১২২টি এবং সুনামগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ ১৩৩টি হাওর অবস্থিত।
দেশের উত্তর-পুর্বাঞ্চালে অবস্থিত হাওরগুলো দেশের প্রধান মিম্নাঞ্চল এলাকা। ব্রম্মপুত্র নদ তার প্রবাহপথ 1787 সালের বন্যা ও ভুমিকম্পের পর মধুপুর গড়ের পুর্বদিক থেকে পশ্চিমে পরিবর্তন করলে পলিমাটি ভরাট হওয়ার অভাবে ও অঞ্চল নিচু থেকে যায়। তাছাড়া মেঘালয় ও বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর সংঘটিত ‘ডাউকি চ্যুতি’র কারণে অতি প্রাচীনকালে এলাকাটি 3 থেকে 10 মিটার বসে যায়। তবে সোমেশ্বরী, যাদুকাটা/রকতি,ধামালিয়া/চলতি এবং সুরমা ও কুশিয়ারা নদী পলি বহন করে ক্রমশ হাওরগুলোকে ভরাট করে চলেছে।
হাওর শব্দের উৎপত্তিঃ
বিভিন্ন গ্রন্থ ও সুত্র মতে, মুল শব্দটি সাগর । অপভ্রংশ ও উচ্চারণ বিচ্যুতি ঘটতে ঘটতে সাগর শব্দটি সায়র,হাওর এবং আঁওর শব্দে পরিনত হয়েছে।অন্যমতে, বাংলাদেশের উত্তর-পুর্বাঞ্চলে ছিল এক দুর্দান্ত সমুদ্র কালিদহ সাগর। সেই সাগর কালের বির্তবনে ছোট বড় ভাগে ভাগ হয়ে হয়েছে হাওর। শব্দের উচ্চারনগত আঞ্চলিকতায় সাগরকে ‘সায়র’ বলা হতো। শব্দের অপভ্রংশ-সাগর>সায়র> হাওর।
হাওর এর উৎপত্তির ইতিহাসঃ
গারো ও মেঘালয় পাহাড়ের কোল ঘেষে বরাক নদীর ভাটি অঞ্চল হিসাবে এই জনপদটি যে কোন একসময়ে একটি বিশাল ভুমিকম্পের মাধ্যমে তৈরী হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। ভুমিকম্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলটি আরো অনেক নীচু ও অসমান প্রাকৃতিক জলাশয়ে রূপান্তরিত হয়ে থাকবে।
কোন কোন লেখকের মতে, ব্রম্মপুত্র নদ তার প্রবাহপথ ১৭৮৭সালে বন্যা ও ভুমিকম্পের পর মধুপুর গড়ের পুর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে পরিবর্তন করলে পলিমাটি ভরাট হওয়ার অভাবে এই অঞ্চল নিচু থেকে যায়। তাছাড়া মেঘালয় ও বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর সংঘঠিত ” ডাউকি চ্যুতি ‘র কারণে অতি প্রাচীনকালে এলাকাটি ৩ থেকে ১০মিটার বসে যায়। তবে স্থানীয় নদীসমুহ যথা সোমেশ্বরী,যাদুকাট,চলতি,রকতি,ধামালিয়া এবং সুরমা নদীর পলি এলাকাটিকে ক্রমশঃ ভরাট করে চলেছে।
ফলে এমনও হতে পারে যে, বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করার জন্য একাধিক ভুমিকম্পের প্রয়োজন হয়েছে। তবে ভুমিকম্পের পরে এ অঞ্চলটি বর্তমানের মতো প্লাবিত হতো না।
ভৈরবে রাজা ষষ্ঠ জর্জ রেল সেতু চালু হয় ১৯৩৭ সালে । এ সেতুর জন্য হাওর এলাকায় বন্যার প্রকোপ বেড়েছে- এমনটি অনেকেই মনে করেন। কার্যত মেঘনা নদীতের সেতু তৈরীর জন্য কয়েক কিলোমিটার প্রসস্ত মেঘনাকে বেঁধে অতিক্ষু্দ্র একটি জায়গায় নিয়ে আসতে হয়েছে, যার ফলে মেঘনা ভৈরব পয়েন্টের উজানে বিপুল পানি আটকে যায়। এ সেতুর নিকট হইতে হাওরের সুচনা। ভৈরব থেকে নৌপথে কাপুডিয়া নামক স্থানে গেলে মেঘনারে আসল তা চোখে পড়ে । হাওরের রূপ সেখানে থেকে উত্তরের দিকে ধাবিত হলে চোখে পড়বে।
হাওর এর ভৌগলিক অবস্থানঃ
Haor areas in Bangladesh |
0 comments:
Post a Comment